কেলভিন চক্র (Calvin Cycle)

C3 Cycle

কেলভিন চক্র হলো সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার অন্ধকার দিকের (Light-Independent) একটি  প্রক্রিয়া। এটি আলোক বিক্রিয়া থেকে প্রাপ্ত শক্তি (ATP এবং NADPH) ব্যবহার করে বাতাস থেকে নেওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) গ্যাসকে উদ্ভিদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শর্করা (গ্লুকোজ) এ পরিণত করে। এই চক্রটি C₃ চক্র নামেও পরিচিত।

এই চক্রের আবিষ্কারক ছিলেন মেলভিন ক্যালভিন, যার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে।

কেলভিন চক্রের স্থান:

এটি ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমা তে সংঘটিত হয়।

কেলভিন চক্রের তিনটি প্রধান ধাপ:

১. কার্বন ডাই-অক্সাইডের স্থিতিকরণ (Carbon Fixation):

  • বাতাস থেকে পাওয়া CO₂ অণু একটি ৫-কার্বনবিশিষ্ট যৌগ রিবুলোজ-১,৫-বিসফসফেট (RuBP)-এর সাথে যুক্ত হয়।
  • এই বিক্রিয়াটি RuBisCO নামক একটি এনজাইম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। (RuBisCO হলো পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকা এনজাইম)।
  • এর ফলে একটি অস্থায়ী ৬-কার্বনবিশিষ্ট যৌগ তৈরি হয় যা পরক্ষনেই ভেঙে গিয়ে ২ অণু ৩-ফসফোগ্লিসারেট (3-PGA)-এ পরিণত হয়।

২. বিজারণ (Reduction):

  • এই ধাপে আলোক বিক্রিয়া থেকে প্রাপ্ত শক্তি (ATP এবং NADPH) ব্যবহৃত হয়।
  • ৩-PGA, ATP-এর সাহায্যে ১,৩-বিসফসফোগ্লিসারেট এ পরিণত হয়।
    এরপর NADPH এর ইলেকট্রন দিয়ে এটি গ্লিসারালডিহাইড-৩-ফসফেট (G3P) এ বিজারিত হয়।
  • G3P হলো কেলভিন চক্রের সর্বপ্রথম স্থায়ী শর্করা যৌগ এবং এটি থেকে গ্লুকোজ, সেলুলোজ, স্টার্চ ইত্যাদি তৈরি হয়।

৩. রাইবুলোজ-১,৫-বিসফসফেটের পুনরুৎপাদন (Regeneration of RuBP):

  • G3P এর বেশিরভাগ অণুই RuBP অণু পুনরায় তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যাতে চক্রটি অবিরামভাবে চলতে পারে।
  • এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়াতেও ATP শক্তি ব্যয় হয়।
  • প্রতি ৬টি CO₂ অণু স্থিতিকরণের পর, মাত্র ১ অণু G3P নেট গ্লুকোজ তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। বাকি ৫টি G3P আবার RuBP তে রূপান্তরিত হয়।