মাইটোসিস (Mitosis) কোষ বিভাজন

Mitosis Cell Divission

মাইটোসিস হল কোষ বিভাজনের সেই নিখুঁত ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, যেখানে একটি মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোজোমের একবার নিয়মাতান্ত্রিক বিভাজনের মাধ্যমে দুটি জিনগতভাবে সম্পূর্ণ অভিন্ন ও সুস্থ অপত্য কোষ (Daughter Cells) সৃষ্টি করে।

মাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব:

  1. জিনগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখা: এটি মাইটোসিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ক্রোমোজোমের সঠিক অনুলিপি তৈরি ও বন্টনের মাধ্যমে অপত্য কোষ দুটির জিনোম মাতৃকোষের সাথে পুরোপুরিভাবে একইরকম থাকে।
  2. দৈহিক বৃদ্ধি: বহুকোষী জীবের দেহের বৃদ্ধি (যেমন: শিশুর বেড়ে ওঠা, গাছের ডাল বাড়ানো) মাইটোসিসের মাধ্যমে নতুন কোষ সৃষ্টির ফলেই ঘটে।
  3. ক্ষতিপূরণ ও কোষ প্রতিস্থাপন: শরীরের ক্ষয়িষ্ণু বা ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোর (যেমন: ত্বক, রক্তকণিকা, পাকস্থলীর আবরণী) প্রতিস্থাপন করে।
  4. অযৌন প্রজনন: অনেক উদ্ভিদ (যেমন: হাইড্রার মুকুলোদগম, স্ট্রবেরির রানার) এবং কিছু সরল প্রাণী অযৌনভাবে বংশবিস্তার করে মাইটোসিসের মাধ্যমে।

মাইটোসিসের পর্যায়সমূহ (Stages of Mitosis):

মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াটি প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত:

  1. ক্যারিওকাইনেসিস (Karyokinesis): নিউক্লিয়াসের বিভাজন।
  2. সাইটোকাইনেসিস (Cytokinesis): সাইটোপ্লাজমের বিভাজন।

ক্যারিওকাইনেসিসকে আবার নিম্নলিখিত পর্যায়ে ভাগ করা হয় –

১। প্রোফেজ (Prophase) – প্রস্তুতির পর্যায়

  • নিউক্লিয়াস: নিউক্লিয়াসের পর্দা (Nuclear envelope) এবং নিউকিওলাস (Nucleolus) ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে শুরু করে।
  • ক্রোমোজোম: ক্রোমাটিন তন্তুগুলি ঘনীভূত ও ছোট হয়ে স্বতন্ত্র, স্পষ্ট ক্রোমোজোম-এ পরিণত হয়। প্রতিটি ক্রোমোজোম দুইটি সিস্টার ক্রোমাটিডে (Sister Chromatids) বিভক্ত থাকে, যা সেন্ট্রোমিয়ার (Centromere) নামক একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থানে সংযুক্ত থাকে।
  • সেন্ট্রিওল: প্রাণীকোষে সেন্ট্রিওল জোড়া বিভক্ত হয়ে বিপরীত মেরুতে (Poles) চলে যায় এবং তাদের মধ্যে স্পিন্ডল তন্তু (Spindle fibres) গঠিত হতে শুরু করে। উদ্ভিদকোষে সেন্ট্রিওল থাকে না, তবে স্পিন্ডল তন্তু গঠিত হয়।

২। মেটাফেজ (Metaphase) – বিষুবীয় সজ্জা পর্যায়

  • স্পিন্ডল যন্ত্র: স্পিন্ডল তন্তুগুলি সম্পূর্ণভাবে গঠিত হয়।
  • ক্রোমোজোমের সজ্জা: ক্রোমোজোমগুলি কোষের মাঝখানে, বিষুবীয় তল বা মেটাফেজ প্লেট (Metaphase Plate)-এ নিজেদের সেন্ট্রোমিয়ার বরাবর সজ্জিত হয়।
  • বিভাজনের জন্য প্রস্তুত: এটি মাইটোসিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়一 কারণ এখানে ক্রোমোজোমগুলি সঠিকভাবে সাজানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হয়, যাতে পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিটি অপত্য কোষে প্রতিটি ক্রোমোজোমের একটি করে অনুলিপি পৌঁছায়।

৩। অ্যানাফেজ (Anaphase) – পৃথকীকরণের পর্যায়

  • ক্রোমাটিডে বিভক্তি : সেন্ট্রোমিয়ার বিভক্ত হয়ে যায়।
  • বিচ্ছিন্নতা : সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি আলাদা হয়ে যায় এবং এখন প্রতিটি আলাদা ক্রোমোজোম হিসেবে গণ্য হয়।
  • মেরুগামিতা : স্পিন্ডল তন্তুগুলি সংকুচিত হওয়ার মাধ্যমে এই আলাদা হওয়া ক্রোমোজোমগুলিকে টেনে বিপরীত মেরুগুলির দিকে নিয়ে যায়। এই পর্যায়ে ক্রোমোজোমের V,L,J বা I আকার ধারণ করতে দেখা যায়।

৪। টেলোফেজ (Telophase) – শেষপর্যায়

  • বিপরীত প্রোফেজ: এই পর্যায়টি অনেকটা প্রোফেজের বিপরীত।
  • নিউক্লিয়াসের পুনর্গঠন: বিপরীত মেরুতে পৌঁছানো ক্রোমোজোমগুলি আবার ক্রোমাটিন জালিকায় পরিণত হয়।
  • নিউক্লিয়ার পর্দা: ক্রোমোজোমগুলির চারপাশে নতুন নিউক্লিয়ার পর্দা গঠিত হয়।
  • নিউকিওলাস: নিউকিওলাস পুনরায় আবির্ভূত হয়।
  • স্পিন্ডল তন্তু: স্পিন্ডল তন্তুগুলি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

সাইটোকাইনেসিস (Cytokinesis) – সাইটোপ্লাজমের বিভাজন

  • এটি কোষ বিভাজনের শেষ ধাপ, যা সাধারণত টেলোফেজের শেষে শুরু হয়।
  • প্রাণীকোষে: কোষপর্দা বিষুবীয় তলের কাছাকাছি ভেতরের দিকে একটা খাঁজ (Cleavage Furrow) সৃষ্টি করে যা গভীর হতে হতে সবশেষে কোষটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে ফেলে।
  • উদ্ভিদকোষে: কোষের এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম হতে সৃষ্ট ফ্রাগমোপ্লাস্ট এবং কোষর ভেতরের গলজি বস্তু থেকে সৃষ্ট ভেসিকলগুলি জমা হয়ে সেল প্লেট (Cell Plate) গঠন করে, যা পরে কোষপ্রাচীর ও কোষপর্দায় পরিণত হয় এবং কোষকে দুভাগে বিভক্ত করে।