Down Syndrome

Down Syndrome

ডাউন সিনড্রোম (Down Syndrome) একটি জেনেটিক ডিসঅর্ডার যা ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতার কারণে ঘটে। এটি মানবদেহের ২১তম ক্রোমোজোমের একটি অতিরিক্ত কপি (ট্রাইসোমি ২১) থাকার ফলে সৃষ্টি হয়। এই অবস্থাটি শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে এবং এটি শিশুর জন্মগত ত্রুটি ও স্নায়বিক সমস্যার সাথে যুক্ত।

ডাউন সিনড্রোমের লক্ষণসমূহ

ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নিম্নলিখিত শারীরিক, মানসিক ও বিকাশগত লক্ষণগুলি দেখা যায়:

১. শারীরিক লক্ষণ:

  • চেহারার বৈশিষ্ট্য:

    • চ্যাপ্টা মুখাকৃতি ও নাকের গঠন।
    • তির্যক চোখ (উপরের দিকে ঝুঁকে থাকা চোখের পাতা)।
    • ছোট ও খাটো কান, যা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচুতে অবস্থিত।
    • জিহ্বা বড় ও বাইরে বেরিয়ে থাকতে পারে (ম্যাক্রোগ্লোসিয়া)।
    • হাতের তালুতে একটি ক্রিজ (সিঙ্গল পামার ক্রিজ)।
    • খাটো গলা ও ঘাড়।

  • পেশী ও অঙ্গের গঠন:

    • পেশীর টোন কম (হাইপোটোনিয়া), যা শিশুর নড়াচড়াকে শিথিল করে।
    • খাটো আঙুল ও হাত-পায়ের গঠনে অস্বাভাবিকতা।
    • জয়েন্টগুলির অতিরিক্ত নমনীয়তা।

২. মানসিক ও বিকাশগত লক্ষণ:

  • বুদ্ধিমত্তার স্তর সাধারণত মৃদু থেকে মাঝারি পর্যায়ের প্রতিবন্ধকতা (IQ 50–70) দেখা যায়।
  • ভাষা ও কথার বিকাশ ধীরগতির হয়।
  • শেখার গতি কম, তবে প্রাথমিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নত করা যায়।
  • কিছু শিশুর আচরণগত সমস্যা (যেমন: ADHD, অটিজমের মতো লক্ষণ) থাকতে পারে।

৩. স্বাস্থ্যগত জটিলতা:

  • হৃদরোগ : প্রায় ৫০% ডাউন সিনড্রোমের শিশুর জন্মগত হৃদরোগ থাকে (যেমন: এট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট)।
  • শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা : ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়া।
  • থাইরয়েড ডিসফাংশন : হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা যায়।
  • পাচনতন্ত্রের সমস্যা : সিলিয়াক ডিজিজ বা অন্ত্রের বাধা।
  • শ্রবণ ও দৃষ্টি সমস্যা : কানের সংক্রমণ বা চোখের ছানি (ক্যাটারাক্ট)।
  • লিউকেমিয়ার উচ্চ ঝুঁকি।

ডাউন সিনড্রোমের কারণ

ডাউন সিনড্রোমের মূল কারণ হলো ক্রোমোজোম ২১-এর ট্রাইসোমি (Trisomy 21), অর্থাৎ এই ক্রোমোজোমের তিনটি কপি থাকা। স্বাভাবিকভাবে মানুষের প্রতিটি ক্রোমোজোমের দুটি কপি (একটি মা থেকে, একটি বাবা থেকে) থাকে। ডাউন সিনড্রোমে নিম্নলিখিত তিনটি জেনেটিক মেকানিজম দেখা যায়:

  1. স্ট্যান্ডার্ড ট্রাইসোমি ২১ (৯৫% ক্ষেত্রে):

    • ডিম্বাণু বা শুক্রাণু তৈরির সময় ক্রোমোজোম বিভাজনে ত্রুটির কারণে ২১তম ক্রোমোজোম আলাদা হয় না। ফলে শিশু ৩টি ক্রোমোজোম ২১ পায়।
    • এটি বাবা-মায়ের বয়স (বিশেষ করে মায়ের ৩৫+ বয়স) এর সাথে সম্পর্কিত।

  2. মোজাইক ডাউন সিনড্রোম (১–২% ক্ষেত্রে):

    • শরীরের কিছু কোষে স্বাভাবিক ২ ক্রোমোজোম ২১ থাকে, কিছু কোষে ৩টি থাকে।
    • লক্ষণগুলি কম তীব্র হতে পারে।

  3. ট্রান্সলোকেশন (৩–৪% ক্ষেত্রে):

    • ক্রোমোজোম ২১-এর একটি অংশ অন্য ক্রোমোজোমের (যেমন ১৪ নং) সাথে যুক্ত হয়।
    • এটি বাবা-মায়ের জিনগত বাহক হওয়ার কারণে হতে পারে।

Down Syndrome

ঝুঁকির কারণ

  • মাতার বয়স: ৩৫ বছরের পর গর্ভধারণে ঝুঁকি বাড়ে (৪০ বছর বয়সে ১:১০০)।
  • পূর্বে ডাউন সিনড্রোমের শিশু থাকলে পুনরায় ঝুঁকি বেশি।
  • জিনগত ট্রান্সলোকেশন বাহক হলে বাচ্চার ঝুঁকি থাকে।

ডাউন সিনড্রোমের ডায়াগনোসিস

  1. প্রিন্যাটাল টেস্টিং:

    • স্ক্রিনিং টেস্ট: NT (Nuchal Translucency) স্ক্যান, ব্লাড টেস্ট (প্রথম ও দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে)।
    • ডায়াগনস্টিক টেস্ট: অ্যামনিওসেন্টেসিস, CVS(Chorionic villus sampling ) বা NIPT (নন-ইনভেসিভ প্রিন্যাটাল টেস্ট)।

  2. জন্মের পর: শারীরিক লক্ষণ ও ক্যারিওটাইপিং (ক্রোমোজোম বিশ্লেষণ) দ্বারা নিশ্চিত করা হয়।

চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

ডাউন সিনড্রোমের কোনো নিরাময় নেই, কিন্তু প্রারম্ভিক হস্তক্ষেপ ও থেরাপি জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে:

  • শারীরিক থেরাপি: পেশীর শক্তি বাড়াতে।
  • বাক ও ভাষা থেরাপি: যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করতে।
  • শিক্ষাগত সহায়তা: বিশেষ শিক্ষা প্রোগ্রাম।
  • স্বাস্থ্য মনিটরিং: হৃদরোগ, থাইরয়েড, শ্রবণ ও দৃষ্টি পরীক্ষা নিয়মিত করা।

Redirecting to vuduflyy.com in 1 seconds...

Know More

Hover here to see exclusive content

11 thoughts on “Down Syndrome

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *